আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি এই বাংলাদেশ বহু জাতি, বহু ভাষা ও বহু সংস্কৃতির একটি দেশ। এখানে প্রধান জনগোষ্ঠী বাঙালির পাশাপাশি রয়েছে প্রায় অর্ধশত জাতিসত্তার মানুষ। দেশের প্রধান ও রাষ্ট্রভাষা বাংলার পাশাপাশি রয়েছে অনেক ভাষা এবং ঐসব জাতিগোষ্ঠীর নানা বর্ণের বিচিত্র সংস্কৃতিও। তারপরও আমরা সবাই জাতীয়তার পরিচয়ে এক এবং দেশকে ভালোবাসার ক্ষেত্রেও ঐক্যবদ্ধ। বৈচিত্র্যের মধ্যেও এই যে একতার শক্তি, এটিই আমাদের বাংলাদেশকে সুন্দর ও বর্ণময় করে তুলেছে।
বাঙালি ছাড়া বাংলাদেশে বসবাসরত অন্যান্য জাতিসত্তার সংখ্যা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে। তবে সাধারণভাবে এই সংখ্যা ৪৬টি বলে অনুমিত। পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের বিভিন্ন পাহাড়ি জনপদ ছাড়াও দেশের সমতলভূমি যেমন কক্সবাজার, পটুয়াখালি, বরগুনা, ময়মনসিংহ, জামালপুর, টাঙ্গাইল, বগুড়া, রাজশাহী, পাবনা, দিনাজপুর ও সিলেট অঞ্চলে প্রধানত এদের বসতি। এইসব জনগোষ্ঠী শত শত বছর ধরে এই ভূখণ্ডে বসবাস করছে। তাদের প্রায় প্রত্যেকেরই রয়েছে নিজস্ব ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি। প্রতিটি জাতিগোষ্ঠীর কাছে তাদের ভাষা ও সংস্কৃতি খুবই প্রিয়।
বাংলাদেশে যেসব সংখ্যাস্বল্প জাতিসত্তার বাস তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো, সাঁওতাল, মণিপুরি, খাসি, স্রো, রাখাইন, হাজং, তঞ্চঙ্গ্যা, বম, কোচ, পাহাড়িয়া, রাজবংশী, মালো, ওঁরাও ইত্যাদি। এদের মধ্যে প্রধান কয়েকটি জনগোষ্ঠীর জীবন ও সংস্কৃতির পরিচয় সংক্ষেপে উপস্থাপন করা হলো।
মঙ্গোলীয় জনগোষ্ঠীর অন্তর্গত চাকমাদের প্রধান বসতি পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলায়। নিজেদের মধ্যে তারা 'চাঙমা' নামে পরিচিত। তারা আর্য ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। তাদের নিজস্ব হরফও আছে। চাকমারা পিতৃতান্ত্রিক। পিতাই পরিবারের প্রধান। চাকমা সমাজের প্রধান হলেন রাজা। গ্রামের প্রধান হলেন কারবারি। গ্রামের যাবতীয় সমস্যা তিনিই নিষ্পত্তি করেন। চাকমারা প্রধানত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। তবে তার পাশাপাশি এখনও তারা কিছু কিছু প্রকৃতিপূজাও করে থাকে। চাকমা পুরুষেরা 'ধুতি' ও মহিলারা 'পিনন' পরিধান করে থাকে। পুরুষেরা নিজেদের তাঁতে তৈরি 'সিলুম' (জামা) পরে। মেয়েরা 'খাদি'কে ওড়না হিসেবে ব্যবহার করে।
চাকমাদের প্রধান খাদ্য ভাত, মাছ, মাংস ও শাক-সবজি। চাকমা-জীবনের নানা পর্যায়ে বিভিন্ন লৌকিক আচার অনুষ্ঠান থাকে। বিয়ের সময় ছেলের অভিভাবককে ঘটকসহ কনের বাড়িতে কমপক্ষে তিনবার যাওয়া-আসা করতে হয়। প্রতিবার চুয়ানি, পান-সুপারি ও পিঠা নিয়ে যেতে হয়। বিজু উৎসব চাকমাদের একটি প্রধান উৎসব। চৈত্রের শেষ দুইদিন 'ফুলবিজু' ও 'মূলবিজু' এবং পহেলা বৈশাখকে 'গ্যাপৰ্য্যা' বলে আখ্যায়িত করে থাকে তারা। লোকনৃত্যগীত হিসেবে 'জুমনাচ' ও 'বিজুনাচ' বেশ জনপ্রিয়।
গারো জনগোষ্ঠীর প্রধান বসতি ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল ও সিলেট অঞ্চলে। মঙ্গোলীয় জনগোষ্ঠীর অন্তর্গত গারোরা মাতৃসূত্রীয়। মেয়েরা পরিবারের সম্পত্তির মালিক হয়। বিবাহের পর বর স্ত্রীর বাড়িতে গিয়ে বসবাস করে থাকে। সন্তান-সন্ততিরা মায়ের পদবি ধারণ করে। তবে পরিবার, সমাজ পরিচালনা ও শাসনে পুরুষেরাই দায়িত্ব পালন করে থাকে। একই গোত্রে বিবাহ গারো সমাজে নিষিদ্ধ। গারোদের নিজস্ব ধর্ম আছে। এটি এক ধরনের প্রকৃতি-পূজা। গারোরা প্রধানত কৃষিজীবী। পাহাড়ে বসবাসকারীরা জুম চাষ করে। আর সমতলভূমির গারোরা নারী ও পুরুষ একসাথে সাধারণ নিয়মে কৃষিকাজ করে। গারোরা জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি জীবনের নানা পর্যায়ে বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান পালন করে। অলঙ্কারও ব্যবহার করে থাকে। গারো সংস্কৃতিতে গীতবাদ্য ও নৃত্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাদের নিজস্ব কিছু বাদ্যযন্ত্রও আছে। ফসল বোনা, নবান্ন, নববর্ষ ইত্যাদি উপলক্ষ্যে বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন হয়। 'ওয়ানগালা' গারোদের একটি জনপ্রিয় উৎসব।
মঙ্গোলীয় জনগোষ্ঠীর অন্তর্গত মারমাদের প্রধান বসতি পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে। মারমা ভাষাও মঙ্গোলীয় ভাষা পরিবারের। তাদের নিজস্ব বর্ণমালাও আছে। মারমারা প্রাচীনকাল থেকেই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। তারা বিয়ের সময় ধর্মীয় ও লোকাচার মিলিয়ে নানা অনুষ্ঠান পালন করে। নিজেদের গোত্রে বিবাহকে মারমা সমাজে উৎসাহিত করা হয়। মারমারা পিতৃতান্ত্রিক। সম্পত্তির উত্তরাধিকারে ছেলে ও মেয়েদের সমান অধিকারের কথা বলা আছে। তবে পরিবার ও সমাজজীবনে পুরুষেরই প্রাধান্য থাকে। বিয়ের পর নারী-পুরুষ ইচ্ছে করলে মা-বাবার বাড়ি কিংবা শ্বশুরবাড়িতে স্থায়িভাবে বসবাস করতে পারে। মারমাদের সামাজিক শাসনব্যবস্থায় রাজা প্রধান। মারমারা জুম চাষ করে এবং বনজ সম্পদ আহরণের মাধ্যমে জীবিকানির্বাহ করে।
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী হলেও মারমারা এখনও বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা এবং নানা আচার-অনুষ্ঠানাদি পালন করে। তাদের সবচেয়ে বড়ো উৎসব হলো নববর্ষে সাংগ্রাই দেবীর পূজা এবং এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত সাংগ্রাই উৎসব তিন দিন ধরে চলে।
মণিপুরিদের আদি নিবাস ভারতের মণিপুর রাজ্য। এদের মধ্যে কোনো কোনো সম্প্রদায়ের নিজস্ব বর্ণমালাও আছে। মণিপুরিরা যেখানেই বসতি স্থাপন করে সেখানে কয়েকটি পরিবার মিলে গড়ে তোলে পাড়া। প্রতিটি পাড়াতেই থাকে দেবমন্দির ও মণ্ডপ। ঐ মন্দির ও মণ্ডপকে ঘিরেই আবর্তিত হয় ঐ পাড়ার যাবতীয় ধর্মীয় ও সামাজিক কর্মকাণ্ড। মণিপুরি সমাজে পাড়া বা গ্রাম ও 'পানচায়' বা পঞ্চায়েতের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
মণিপুরি জনগোষ্ঠী সাতটি গোত্রে বিভক্ত। মণিপুরিদের প্রাচীন ধর্মের নাম 'আপোকপা'। তবে মণিপুরিদের অধিকাংশই এখন সনাতন ধর্মের চৈতন্যমতের অনুসারী। মণিপুরিদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ইসলাম ধর্মাবলম্বী। সনাতন ধর্মাবলম্বী মণিপুরিদের প্রধান উৎসব রাস উৎসব, রথযাত্রা ইত্যাদি। রাস উৎসব উপলক্ষ্যে রাসনৃত্য ও মেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। মণিপুরিরা প্রধানত কৃষিজীবী। ভাত, মাছ, শাক-সবজি মণিপুরিদের প্রধান খাদ্য। মণিপুরি পুরুষেরা সাধারণত ধুতি, গামছা, জামা ইত্যাদি পরিধান করে। আর মেয়েরা পরে নিজেদের তৈরি বিশেষ ধরনের পোশাক।
পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি, রামগড়, রাঙামাটি, কাপ্তাই এবং চট্টগ্রাম জেলা, বৃহত্তর কুমিল্লা, নোয়াখালি ও সিলেট অঞ্চলে বসবাসকারী ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী মঙ্গোলীয় মহাজাতির অংশ। তাদের ভাষার নাম 'ককবরক'। এদের নিজস্ব কোনো বর্ণমালা নেই। ত্রিপুরা সমাজব্যবস্থা পিতৃতান্ত্রিক। ছেলেরাই সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়। ত্রিপুরারা বর্তমানে সাধারণভাবে সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বী। কিন্তু তারা এখনও তাদের প্রাচীন লোকজ ধর্মের নানা দেব-দেবীর পূজা-অর্চনা এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদি করে।
ত্রিপুরা মেয়েরা কাপড় বয়নে খুবই দক্ষ। তারা নিজেদের পরনের কাপড় নিজেরাই তাঁতে তৈরি করে। পুরুষেরা পরিধান করে নিজেদের তৈরি গামছা ও ধুতি। ত্রিপুরারা কৃষিজীবী। তারা পাহাড়ে জুম চাষ করে। ত্রিপুরাদের সংগীত ও নৃত্য খুবই সমৃদ্ধ। তাদের মধ্যে বিভিন্ন সংগীতের প্রচলন যেমন আছে, তেমনি আছে নানা প্রকারের নৃত্যও। ত্রিপুরাদের প্রধান উৎসব নববর্ষ বা বৈসু। ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর 'বৈসু', মারমাদের 'সাংগ্রাই' ও চাকমাদের 'বিজু' উৎসবের প্রথম অক্ষর নিয়ে 'বৈসাবি' উৎসব এখন নববর্ষ উপলক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতীয় উৎসব।
সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর লোক প্রধানত উত্তরবঙ্গ ও সিলেটের চা বাগানে বসবাস করে। তাদের ভাষা অস্ট্রিক পরিবারের। সাঁওতাল সমাজ পিতৃতান্ত্রিক। সম্পত্তির মালিকানায় এবং সমাজ ও পরিবারে পুরুষই প্রধান। সাঁওতালদের নিজস্ব ধর্ম আছে। কিন্তু কোনো ধর্মগ্রন্থ নেই। পেশার দিক থেকে সাঁওতাল জনগোষ্ঠী প্রধানত দুই ভাগে বিভক্ত - কৃষক ও শ্রমিক। অনেকের জন্যে কৃষি যেমন প্রধান জীবিকা তেমনি অনেকে আবার শ্রমিক হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করে থাকে। ব্রিটিশ-বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে সাঁওতালদের সংগ্রামী ভূমিকা, বিশেষ করে 'সাঁওতাল বিদ্রোহ' ও 'নাচোল কৃষক বিদ্রোহ' ইতিহাসে বিশেষভাবে স্মরণীয় হয়ে আছে।
সাঁওতালরা খুবই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে। বাড়িঘর লেপে মুছে পরিষ্কার রাখা হয় এবং দেয়ালে নানা রঙ দিয়ে ছবি আঁকা হয়। 'সোহরাই' হচ্ছে সাঁওতাল সমাজের শ্রেষ্ঠ উৎসব। এটা অনেকটা পৌষ-পার্বণের মতো। সাঁওতাল নৃত্যে মেয়ে-পুরুষ দলবদ্ধ হয়ে নাচে। তাদের ঝুমুর নাচ খুবই জনপ্রিয়।
বাংলাদেশের এইসব ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জাতিসত্তার জীবন ও সংস্কৃতি আমাদের জাতীয় সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে-বর্ণিল ও বৈচিত্র্যপূর্ণ করেছে। দেশের সামগ্রিক উন্নয়নেও রয়েছে তাদের বিরাট অবদান। তারা আজ জাতীয় মূলধারারই অংশ।
(সংক্ষেপিত)
সংখ্যাম্বল্প জাতিসত্তা - বাংলাদেশের জনসংখ্যার বৃহত্তর অংশ হচ্ছে বাঙালি। বাঙালি ছাড়া আরও কিছু জনগোষ্ঠী বা জাতি আছে, যারা ভাষা, সামাজিক রীতিনীতি প্রভৃতির দিক থেকে বাঙালিদের মতো নয়। তাদের সংখ্যা বাঙালিদের তুলনায় কম। যেমন: চাকমা, মারমা, সাঁওতাল, হাজং, ত্রিপুরা ইত্যাদি।
সংস্কৃতি - ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের আত্মপরিচয় পাওয়া যায় এমন সব বৈশিষ্ট্যকে বলা হয় সংস্কৃতি। বাঙালির কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে, সেগুলোর দ্বারা বাঙালিকে অন্যান্য জাতিগোষ্ঠী থেকে আলাদা করা যায়। তেমনি ক্ষুদ্র জাতিসমূহের সংস্কৃতিও আলাদা আলাদা। তবে নাগরিকত্বের পরিচয়ে বাংলাদেশের সকলেই এক ও অভিন্ন।
আর্যভাষা - দুনিয়ার একটি প্রধান ভাষাগোষ্ঠীর নাম ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠী। তার একটি শাখার নাম আর্য ভাষা। এই আর্য ভাষা থেকে বাংলা, হিন্দি, ওড়িয়া, চাকমা প্রভৃতি ভাষার সৃষ্টি হয়েছে।
পিতৃতান্ত্রিক পরিবার - মানব সমাজে দু'রকমের পরিবার প্রথার সৃষ্টি হয়েছে: (ক) পিতৃতান্ত্রিক, (খ) মাতৃতান্ত্রিক। পরিবারের প্রধান নেতৃত্ব, অর্থনৈতিক ক্ষমতা ও সম্পত্তি যদি পুরুষের হাতে থাকে তাহলে সেরকমের পরিবারকে বলা হয় পিতৃতান্ত্রিক পরিবার। আর যে পরিবার প্রথায় উক্ত নেতৃত্ব ও ক্ষমতা নারীর হাতে থাকে, তাকে বলা হয় মাতৃতান্ত্রিক। বাঙালিদের মতো চাকমাদের পরিবার পিতৃতান্ত্রিক। তবে একালে মাতৃতান্ত্রিক পরিবারেও পিতৃতান্ত্রিক পরিবারের প্রভাব পড়েছে।
খাদি - হাতে কাটা (মেশিনে নয়) সুতা দিয়ে তৈরি কাপড়।
লৌকিক আচার-অনুষ্ঠান - স্থান ও জাতি বিশেষের ঐতিহ্যগত আচার-অনুষ্ঠান যার মধ্যে বর্তমান নাগরিক রুচির প্রভাব পড়ে নি, তাকে লৌকিক আচার-অনুষ্ঠান বলা হয়।
মাতৃসূত্রীয় পরিবার- - কিছু সমাজ আছে যেখানে পুরুষগণ সমাজ পরিচালনা ও শাসনের অধিকারী হলেও নারীদের পরিচয়েই পরিবার পরিচিত হয়। এ ধরনের পরিবারকে মাতৃসূত্রীয় পরিবার বলে। যেমন- গারো পরিবার।
পদবি - উপাধি, যা নামের শেষে যোগ করে বংশ পরিচয় দেওয়া হয়। পদবি বলতে কর্মক্ষেত্রে স্তর বা মর্যাদাও বোঝায়।
জুম - পাহাড়ে চাষাবাদের বিশেষ পদ্ধতি।
মঙ্গোলীয় ভাষাগোষ্ঠী - একটি ভাষাগোষ্ঠী; এই ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত প্রতিটি ভাষার আলাদা রূপ ও বৈশিষ্ট্য আছে।
মণ্ডপ - পূজা বা সভা-সমিতির জন্য ছাদযুক্ত চত্বর।
বয়ন - বোনা।
বাংলাদেশে বসবাসরত বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের অবহিত করা।
বাংলাদেশে মূল জনগোষ্ঠী হচ্ছে বাঙালি জাতি। বাঙালি ছাড়াও এদেশে আরও অনেক জাতিগোষ্ঠীর মানুষ বাস করে। তাদের মধ্যে আছে চাকমা, গারো, মারমা, মণিপুরি, ত্রিপুরা, সাঁওতাল প্রভৃতি জনগোষ্ঠী।
এই জাতিগোষ্ঠীর প্রত্যেকটিরই রয়েছে স্বতন্ত্র পরিচয়, নিজস্ব সংস্কৃতি ও জীবনাচার। তাদের মধ্য থেকে কয়েকটি সম্পর্কে এখানে সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে। চাকমা, গারো, মারমা, মণিপুরি, ত্রিপুরা ও সাঁওতালদের সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত এই আলোচনা বৃহত্তর জাতীয়তাবোধ সৃষ্টিতে সহায়ক হবে বলে ধারণা করা যায়।
বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সংস্কৃতি ও জীবনাচার আমাদের জাতীয় সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে, করেছে বৈচিত্র্যময় ও বর্ণিল। দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে তারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।
বাংলাদেশে মণিপুরি সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রে পথিকৃৎ কবি ও প্রাবন্ধিক এ. কে. শেরাম। তাঁর জন্ম ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে হবিগঞ্জে। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো: 'বসন্ত কুন্নি পালগী লৈরাং', 'মণিপুরি কবিতা', 'চৈতন্যে অধিবাস', 'মনিদীপ্ত মণিপুরি ও বিষ্ণুপ্রিয়া বিতর্ক' ইত্যাদি।
ক. তোমার এলাকার বিভিন্ন লোকজ-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পরিচয় দিয়ে একটি রচনা লেখ (একক কাজ)।
১. ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর উৎসব কোনটি?
ক. সাংগ্রাই
খ. বিজু
গ. বৈসু
ঘ.
সোহরাই
২. বাঙালি ছাড়া অন্যান্য জাতিসত্তা জাতীয় মূলধারারই অংশ কারণ, তারা-
i. আমাদের সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে
ii. জাতীয় সমৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে
iii. ধর্মীয় দিক থেকেও তারা গুরুত্বপূর্ণ
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii
খ. ii ও iii
গ. iii ও i
ঘ. i, ii ও iii
উদ্দীপকটি পড়ে ৩ ও ৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও:
বাবার চাকরির সুবাদে সুমি সিলেটের একটি স্কুলে ভর্তি হয়। সেখানে লুসি দাড়িং নামে একটি মেয়ের সাথে তার বন্ধুত্ব হয়। কথা প্রসঙ্গে সুমি জানতে পারে 'দাড়িং' লুসির মায়ের পদবি। শুনে তার কাছে অদ্ভুত লাগে যে বিয়ের পর লুসির বাড়িতেই তার বর চলে আসবে।
৩. উদ্দীপকে বাংলাদেশের জাতিসত্তা সম্পর্কিত এই রচনায় কোন জাতিসত্তার পরিচয় পাওয়া যায়?
ক. চাকমা
খ. মারমা
গ. গারো
ঘ. সাঁওতাল
8. উদ্দীপকের জাতিসত্তা আমাদের জাতীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ কারণ, তারা আমাদের-
i. সংস্কৃতির ধারক
ii. অবিচ্ছেদ্য অংশ
iii. ঐতিহ্যকে ধারণ করেছে
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii
খ. i ও iii
গ. ii ও iii
ঘ. i, ii ও iii
১। বাহার তার বন্ধু সঞ্জীবের সাথে একটি পার্বত্য অঞ্চলে বেড়াতে যায়। সেখানে গিয়ে সে জানতে পারে স্থানীয় লোকজন সবাই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী, পিতৃতান্ত্রিক। তারা দেব-দেবীর পূজা করে এবং নববর্ষ এলে সাংগ্রাই উৎসব পালন করে। সেখানে কয়েকদিন থাকার পর তারা অন্যত্র বেড়াতে যায়। সেখানকার সমাজের প্রধান হলেন রাজা। গ্রামের প্রধান হলেন কারবারি। সেখানে পুরুষেরা ধুতি ও মহিলারা 'পিনন' পরিধান করে থাকে। পুরুষেরা নিজেদের তৈরি 'সিলুম' পরে। মেয়েরা খাদিকে ওড়না হিসেবে ব্যবহার করে।
ক. চাকমারা পহেলা বৈশাখকে কী বলে আখ্যায়িত করে?
খ. পঞ্চায়েতের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কেন?
গ. উদ্দীপকের প্রথম স্থানটি এই রচনার কোন জাতিসত্তাকে নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. "বাহার ও তার বন্ধু শেষে যেখানে বেড়াতে গেল তা বাংলাদেশের একটি জাতিসত্তার বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করে।"-উদ্দীপক ও রচনার আলোকে বিশ্লেষণ কর।
common.read_more